বাংলা নববর্ষ উৎসব: ভাবনার অন্তরালে

ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ


-কবি ও গবেষক; প্রফেসর, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলা এবং বাঙালি শব্দদুটো আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত।
বাঙালিয়ানার বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে আমরা নানা আনুষ্ঠানিকতারও আশ্রয় গ্রহণ করি। নিজেদের সাজগোজ, পোশাক-আশাক, খাওয়া-দাওয়া, চলা-ফেরা, কথাবলার ঢঙ-বৈশিষ্ট্য সব কিছুর মধ্যে একটু ভিন্নমাত্রা সংযোজন করে বাঙালিয়ানার প্রকাশ ঘটাতে চাই। কয়েকবছর আগের কথা বলছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের মতো আমাদের বিভাগও আয়োজন করে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা। একজন ছাত্র বাবাগেঞ্জি বলে কথিত হাফহাতা শাদা গেঞ্জি, ধুতি, কাঁধে গামছা এবং কপালে চন্দন টিপ পরে আমার সামনে এসে বললো- স্যার, এক্কেবারে খাঁটি বাঙালিয়ানা না স্যার! আমি দেখে বললাম- তোমার বাবা কি করেন? সে বললো- গ্রামের মানুষ। স্কুল শিক্ষক। টুকটাক কৃষি কাজও করে। তোমার দাদা? কৃষক ছিলেন। তুমি কি তাদের দেখেছো? সে অবাক হয়ে বললো- কি বলেন স্যার, আমার বাপ-দাদাকে দেখবো না? বললাম- তারা কি বাঙালি নাকি বিহারী? সে গর্বের সাথে জবাব দিলো- কেনো স্যার, অবশ্যই বাঙালি। আমার দাদা মুক্তিযোদ্ধা। তারা কি তোমার মতো এমন পোষাক পড়ে? সে লজ্জিত ভঙিতে বললো- না স্যার। আমি বললাম- তাহলে কি তারা বাঙালি না? সে আর কোন কথা না বলে দৌড় দিয়ে হলে গিয়ে স্বাভাবিক পোশাক পরে শোভাযাত্রায় যোগ দিলো।
বাংলা ভাষাভাষি সকল মানুষই আমরা বাঙালি। এ ভাষাকে লালন করে যারা জীবন প্রবাহ চালিয়ে নিচ্ছেন তারাই বাঙালি। বাংলাদেশের বাইরে যে কোন দেশের বাংলা ভাষাভাষিকেও আমরা বাঙালি বলতে পারি। তারা যে কোন ধর্মের লোকই হোক না কেন- বাংলা ভাষাভাষি মানেই বাঙালি। ধর্মীয় বিধিবিধানের পাশাপাশি তারা বাঙালি সমাজে প্রচলিত প্রবাহমান সংস্কৃতির সুবাসও বহন করে চলে। বাংলা ভাষাভাষি আমারা যারা ইসলামের অনুসারী তারা সবাই বাঙালি মুসলমান। ধুতি এবং চন্দনটিপ একটি ধর্মের বিশেষ পোষাক এবং বিশেষ ধর্মীয় ব্যক্তির
সাজগোজ হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে। সেই ধর্মের সংস্কৃতির সাথে মিশে যাওয়াকেই কেউ কেউ বাঙালিয়ানা বুঝিয়ে থাকেন। যে সংস্কৃতি শির্ককে উস্কে দেয় সে সংস্কৃতি থেকে অবশ্যই বাঙালি মুসলমানরা বেরিয়ে আসবে। আমরা যেমন আধুনিকতার মোড়কে পুরনো অনেক কুসংস্কারকে বাদ দিয়েছি তেমনি তাওহিদের কারণে শির্কমিশ্রিত ঐতিহ্যকে পরিহার করা একজন বাঙালি মুসলমানের অবশ্য করণীয় বিষয়।
বাঙালি ঐতিহ্য অনেক পুরনো। ধর্মীয় প্রভাবের কারণে এ ঐতিহ্যে অনেক সংযোজন বিয়োজন ঘটেছে। পাল আমলে বৌদ্ধদের প্রভাবে যেমন বাঙালিয়ানাতে নতুন সংস্কৃতি সংযোজিত হয়েছে তেমনি সেন আমলেও হিন্দু ধর্মের নানাবিধ আনুষ্ঠানিকতা বাঙালি সংস্কৃতির শেকড়ে প্রবেশ করেছে। মুসলিম শাসনামলে যোগ হয়েছে সেখানে নতুন মাত্রা। খাদ্যে হালাল-হারাম, পর্দার কারণে পোশাক-আশাক, চালচলন-অভিবাদনে ইসলামি রীতি এবং ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার কারণে আলাদা রকমের একটি সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। প্রচলিত আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের মধ্যকার যে সমস্ত বিষয় শির্ককে উল্কায় না এমন রীতিনীতিও গ্রহণীয় হয়ে এসেছে মুসলিম সমাজে। এ জন্য আমরা শুধুমাত্র মুসলমান কিংবা বাঙালি শব্দে অভিহিত নই। আমরা বাঙালি মুসলমান। এই ঘরানারীতি মেনেই আমরা বাঙালিয়ানাকে ধারণ করবো। জাতিসত্ত্বার অস্থিমজ্জার সাথেই আমাদের এ বিষয়টি গ্রন্থি থাকবে।
‘ঝড় এলো এলো ঝড় আম পড় আম পড়’ আম গাছের নিচে বসে এমনতরো শ্লোগান নিয়ে আম কুড়োনো মজা যে কত রোমাঞ্চকর তা অভিজ্ঞ বক্তি ছাড়া অনুভব করতে পারবে না। গ্রাম্যজীবনে কৈশোরের উজ্জ্বলতা ও দূরন্তপনার সাথে কাঁচা-পাকা আম কুড়োনোর স্মৃতি হৃদয় থেকে এখনো মুছে ফেলতে পারিনি। বিশেষকরে ডালভাঙ্গা ঝড়ের পরে। আমতলার হৈচৈ একটি অন্যরকম মজা। সেই মজার বন্যা বয়ে আনে বছরের নতুন ঋতু গ্রীষ্ম। মূলত বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাস নিয়েই এ ঋতুর অবয়ব তৈরি। বছরের প্রথম মাস হিসেবে এর আলাদা একটা আদর-কদরও জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে লক্ষ্যনীয়। বিশেষকরে মানুষ যখন অপসংস্কৃতির হাত থেকে বাঁচার প্রয়াসে মাটির সংস্কৃতির কাছাকাছি যাবার প্রয়াস চালাচ্ছে তখনও বিশেষ শ্রেণি গোষ্ঠীর কিছু মানুষ আধুনিকতার মোড়কে এ উৎসবটাকেও শির্কবাদের দিকে ঝুঁকে দেবার সকল পরিকল্পনা সফলতার সাথে বাস্তবায়িত করছে। জাতির জন্য এটা কতটা কল্যাণ আর অকল্যাণ বয়ে আনতে তা বিশ্লেষণ করার জন্যে গবেষণার দরকার নেই, একটুখানি চোখ কান খোলা রাখলেই যথেষ্ট।
বাংলাদেশের আলেম সমাজে বৈশাখ পালনের বিষয়ে নানা মত লক্ষ্যনীয়। অনেকে ঢালাওভাবে বাংলা নববর্ষকে একত্ববাদী সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে সরাসরি শির্কবাদী সংস্কৃতি বলে মাসয়ালা দিয়ে থাকেন। এমন কি বাংলা নববর্ষকে অংশীবাদী সংস্কৃতিরই উৎসব বলে চালিয়ে দেবার প্রবণতাও বেশ জোরেশোরে লক্ষ্যনীয়। কেউ কেউ আবার এ ধরনের আলোচনায় সংকীর্ণ মানসিকতার গন্ধ শোকেন। তারা খানিকটা নিরব থেকে না দেখার ভান করেন। আর কেউবা মনে করেন এটা নিয়ে আলোচনারই বা প্রয়োজন কি? হাতে গোনা দুইচারজন ব্যক্তি মনে করেন এটাকে একটা নিছক নির্মল আনন্দের দিন হিসেবে উপস্থাপন করা উচিৎ। বিশ্বাসী মহলের এমন দূর্বল চিন্তা ও বির্তকের মাঝে ইতোমধ্যেই এটি এখন একটি বাঙালির উৎসব অনুষ্ঠানের রূপ নিয়েছে। চৈতালী খরা যখন মানুষের পকেটকেও অর্থশূণ্য করেছে তখনও ঋণ করে হলেও এ উৎসবের কেনাকাটা নিয়ে বাজারে বাজারে ভিড়ের মাতম। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে উৎসব ভাতার প্রক্রিয়ায় বৈশাখী ভাতাকেও যুক্ত করেছেন। একদশক আগে এটা রাজধানীতে জমজমাট অবস্থায় চলে এলেও এখন শুধু বিভাগীয় শহর নয়, গ্রাম-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে এর ঢেউ। নিজেদেরকে আধুনিকতার সাথে খাপ খাওয়াতে হলে বৈশাখী ফ্যাশনের সাথে মিলিত হতেই হবে। এমন মানসিকতা এখন শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরোপুরিভাবে চলে এসেছে।
হুজুগে বাঙালি বলে একটা কথা বেশ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আমাদের সমাজে। আমরা নিজেরা হুজুগে পড়ে যাই আবার নিজেরাই নিজেদেরকে এ নামে সম্বোধন করি। বিনোদনের মাধ্যমগুলো যখন
বিদেশী আগ্রাসনের শিকার তখন কিছু দেশপ্রেমিক মানুষ নির্মল দেশজ অনুভূতির উম্মোচন করতে আমাদের স্বকীয় সংস্কৃতির বিকাশে মনোনিবেশ করেছেন। এটা নিঃসন্দেহে মহৎ উদ্যোগ। কিন্তু আমরা মনে হয় খুব সচেতনতার সাথে এ কাজটি করতে পারিনি। যাদের থেকে নিজেকে আলাদা করতে শেকড়ের সন্ধানে বেরিয়ে এলাম আবারো তারাই আমাদের মাথার উপর ভর করেছে অদৃশ্যের শক্ত হাতে ভর দিয়ে। শেকড়ের নামে আমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে টিপচন্দন, উলুধ্বনি, প্রাণিপুজা আর মুখোশ কালচারে। আজ বৈশাখী মেলার নামে বইছে বিশ্বাসের বৈরি বাতাস। চলছে উলঙ্গ সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা। যুবক-যুবতির নির্লজ্জ মেলামেশা। বটমুলে বসে কপোত-কপোতির পাস্তা খাওয়ার নামে বইছে অশ্লীলতার স্রোত। প্রগতির নাম করে অশ্লীলতার বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে। বাঙালি সংস্কৃতির নাম করে বিশ্বাস বিরোধী ও চরিত্র বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এ সব বিশেষত কোন কোন ধর্মের আবরণে পরিচালিত হয়ে থাকে। মিডিয়া ও ফ্যাশন হাউসগুলোর অতি উৎসাহী কর্মসূচী নিচ্ছে। ফলে এ ধারায় মানব সম্পৃক্ততা খুব দ্রুততার সাথে সম্প্রসারিত করছে। যে বৈরি হাওয়ার ভয়ে শেকড়ের সন্ধানের প্রয়াস, সেই হাওয়া ধুম্মাচালে দোলা দিচ্ছে ভিন্ন কৌশলে। এর ব্যাপারে কোন কথা বললেই তাকে প্রগতির অন্তরায় কিংবা বাঙালি সংস্কৃতির বিরোধী বলে আখ্যা দেয়া হয়। যারা এমনটি বলেন তাদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, আসলে বাঙালির পরিচয় কি? বাঙালি মানে কি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে চলা? আজকাল জ্বিন, ভুত, কুকুর, শৃগাল, বানর ও গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন প্রাণির মুখোশ পড়ে বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা চলছে। এটাকে প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে উস্থাপনের চেষ্টা করা হলেও এ দৃশ্য দেখে রসিকজন বলে থাকেন, বাঙালি মানে যদি পশুদের মুখোশ হয়, তবে কি আমাদের পূর্বপুরুষ মানুষ ছিল না?
বাংলা নববর্ষকে শিক সংস্কৃতির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু শেকড়ের দিকে তাকালে সত্যিকার অর্থে বাংলা নববর্ষের সাথে শিক যুক্ত ছিল না। বৈশাখী ঐতিহ্য বিশ্বাস ও স্থানীয় রীতি-পদ্ধতিরই প্রতিফলন ছিল। কেননা এ সনের প্রবর্তন হয়েছে হিজরি সালকে ঘিরে এবং মাসের নামগুলোকে নেয়া হয়েছে শতাব্দ থেকে। মোগল সম্রাট মহামতি আকবর বিভিন্ন অঞ্চলের খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য অঞ্চল বিশেষে ফসলী বা মৌসুমী সনের প্রবর্তন করেছিলেন। বাংলার জন্য বাংলা সন, মহারাষ্ট্রের জন্য সুর সন, উড়িষ্যার জন্য আমলী সন প্রভৃতি। ১৫৮৫ সালের ১০ মার্চ এ সালের নির্দেশনামা জারি হয়েছে। কিন্তু হিজরি সালকে ধারণ করে গণণা শুরু করা হয়েছে সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহনের সময়কাল থেকে অর্থাৎ ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ মোতাবেক ৯৬৩ হিজরি থেকে। ৯৬৩ হিজরি থেকে বঙ্গাব্দ শুরু হলেও এখন যেভাবে মাসের সাতটি দিন প্রচলিত তখন তেমনটা ছিল না। সম্রাট আকবরের সময় মাসের প্রত্যেকটি দিনের জন্য পৃথক নাম ছিল। পরবর্তীতে সম্রাট শাহজাহান একজন বিদেশি পণ্ডিতের সাহায্য নিয়ে সাপ্তাহিক পদ্ধতিতে দিনের নামকরণ পদ্ধতির প্রচলন করেন। বঙ্গাব্দের সাথে খ্রিষ্টীয় সনের দিন-তারিখের পার্থক্যের কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে উভয় সন গণনায় সমস্যা হতো। এজন্য ১৯৬৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধানে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে বঙ্গাব্দ সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ এপ্রিলকে স্থায়ীভাবে বাংলা নববর্ষ শুরুর দিন হিসাবে ঠিক করা হয়। সুতরাং, যেহেতু সৌরবছর ৩৬৫ দিনে এবং হিজরি বছর ৩৫৪ দিনে হয়। ফলে প্রতি বছর হিজরি সাল ১১ দিন এগিয়ে যায়, তাই বর্তমানে বাংলা সন ১৪২৯ হলেও হিজরি সন ১৪৪৩ এ পৌঁছেছে। আর এ কথা সকলেরই ভালোভাবে জানা আছে যে, হিজরি সাল শুরু হয়েছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর হিজরতের ঘটনা ও সময়কে কেন্দ্র করে এবং তা প্রবর্তন করেছেন খোলাফায়ে রাশেদীনের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমার বিন খাত্তাব
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন
অকল্যাণ এ বিষয়ে চোখ কান খোলা রাখা এখন সময়ের দাবী। শেকড়ের সন্ধানে পথ চলতে গিয়ে বিশ্বাসের শেকড়ে আঘাত দিলে তা কোনভাবেই মঙ্গলজনক হবেনা। তাই বিশ্বাসের ধারা বজায় রেখেই এ উৎসবকে গ্রহণ করতে হবে। এ উৎসবের নান্দনিক বিষয়গুলোকে শিকমুক্তভাবে উপস্থাপনা করতে হবে। এটি এখন বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। সুতরাং হারাম ফতুয়া দিয়ে বসে থাকার চেয়ে আমাদের বিশ্বাসের ধারাকে অক্ষুন্ন রেখে কর্মসূচি তৈরি করার বিষয়ে গবেষণা ও কর্মপ্রয়াস চালাতে হবে। প্রচলিত সমাজের মধ্যে বসবাস করেই এগিয়ে নিতে হবে আমাদের ঐতিহ্যের শেকড়। ছড়িয়ে দিতে
S
(রা.)। সুতরাং সূচনালগ্ন থেকেই বাংলা নববর্ষের সাথে শির্কের কোন লেনদেন ছিলো না।
ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো, সিডর ইত্যাদি বৈশাখের সব চেয়ে বড় আতংক; যা প্রতিবছরই দেশের জনগণ ভোগ করে থাকে। এ সবকে যতটা ভয় পাই তার বেশী ভয় পাই অপসংস্কৃতির সিডরে। কারণ ঝড়ে ক্ষতি হয় একটি এলাকার। অল্পদিনেই এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাইক্লোন, টর্নেডো, টাইফুন, সিডর সবচেয়ে বেশি মারাত্মক। কারণ এতে গোটা জাতি ধ্বংস হয়। যে জাতির সাহিত্য-সংস্কৃতি যত উন্নত, সে জাতিও ততটা উন্নত। আজ আমাদের দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনে সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, সিডর কোন কিছুই বাকি নেই। সংস্কৃতি মানেই যেহেতু বোধ বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। অর্থাৎ মানুষের বিশ্বাস ও রুচিবোধের বহিঃপ্রকাশই হচ্ছে সংস্কৃতি। সেহেতু এ দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি থাকবে আমাদের বোধ বিশ্বাসের ভিত্তিতে। যে সংস্কৃতি হবে পরিচ্ছন্ন, রুচিশীল, প্রগতিশীল, উন্নয়নমুখী ও কল্যাণ ধর্মী। কিন্তু তা কি আদৌ হচ্ছে?
সময়ের বৈরী হাওয়ার সাথে পথচলা কঠিন। এতে কতটা কল্যাণ আর
হবে বিশ্বাসের ফলগুধারা। মূলত বৈশাখী ঐতিহ্য কোন অংশীবাদী কিংবা অশ্লীলতার মোড়কে জড়ানো উৎসব নয়। এটি অতীতের ব্যর্থতা ও দুঃখ-বেদনাকে ভুলে নতুন স্বপ্নে এগিয়ে যাবার প্রত্যয়দৃপ্ত একটি দিন। এ উৎসবের সম্পর্ক মায়ের সাথে, মাটির সাথে, বিশ্বাসের সাথে এবং লোকজ ঐতিহ্যের সাথে। এ উৎসব বুঝে দিতে চায় জীবনের হালখাতা, খুলে দিতে চায় স্বকীয়তা ও সম্ভাবনার অফুরন্ত দুয়ার। এ সম্ভবনাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। এ জন্য বিশ্বাসী ধারার সকল ঐতিহ্যপ্রেমিকদের আরো বেশি সচেতন হয়ে এগিয়ে আসতে হবে, রুদ্ধ করতে হবে অপসংস্কৃতি ও শির্কবাদী আচার-আচরণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *