ডা. এম এ মুমিত আজাদ
ডাক্তার
মানুষের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ভর করে ভিটামিন এবং বিভিন্ন ধরনের মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টের উপর। যার মধ্যে অন্যতম হলো দুগ্ধজাত খাবার, প্রোটিন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন বি১২ ইত্যাদি। প্রতিদিনের খাবারের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার রাখলে তবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যাবে।
দুগ্ধজাত খাবারঃ
দুগ্ধজাত খাবার কে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় প্রোবায়োটিক ফুড বলা হয়। যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা তৈরিতে বিশেষ কার্যকরী। দুধ, দই, ঘোল, ছানা ইত্যাদি খেলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
আমিষ বা প্রোটিনযুক্ত খাবারঃ
প্রোটিন শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোড়দার করতে সহায়তা জোগায়। শরীর সুস্থ রাখতে তাই নিয়মিত প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া দরকার। নিয়মিত ডিম, মাছ, প্রানীজ মাংস, বিভিন্ন ধরনের ডাল, শীম ও নাট জাতীয় খাবার থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়। ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, বাদাম, ডাল জাতীয় খাবারের পাশাপাশি সবজি ও ফল খাওয়ার চেষ্টা করা। যে কোনো ১টা আইটেমের পাশাপাশি সালাদ, লেবু খাওয়ার চেষ্টা করা। প্রতিদিনের খাবারে বাদাম অন্তর্ভুক্ত করা। ভিটামিন-সি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চমৎকার একটি উপাদান। ভিটামিন-সি মানব দেহের অতি প্রয়োজনীয় একটি মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট যা প্রাকৃতিক ভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা পেতে পারি। এটি আমাদের দেহত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন-সি এর প্রাকৃতিক উৎসগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- আমলকি, লেবু, কমলা, কাগজি লেবু, পেয়ারা, আমড়া, পেঁপে ইত্যাদি। আমাদের শরীর ভিটামিন-সি জমা করে রাখতে পারে না, তাই প্রতিদিন এই সব খাবার গ্রহণ করা জরুরী। দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন ও খনিজ লবণের সঙ্গে প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। ভিটামিনের মধ্যে এ, ডি, ই, সি। আবার খনিজ লবণের মধ্যে ভিটামিন ডি’র সাহায্যকারী ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি’র সাহায্যকারী আয়রন ছাড়াও জিংক, সেলেনিয়াম এর মতো মাইক্রোনিউটিয়েন্টস ও প্রয়োজন। হলুদ একটি অত্যন্ত উচ্চমানের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। আর হলুদের প্রধান উপাদান হল এই কারকু্যুমিন। তাই রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে নিয়মিত হলুদ খাওয়া উচিত। সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ আর একগ্লাস গরম পানিতে একটি লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া যায়। যে কোনো অসুখে ইমিউনিটি বাড়ানো যায়। রসুনে থাকা অ্যালিসিন দেহকে নিরোগ রাখতে সাহায্য করে। রসুনে থাকা ভিটামিন-সি, ভিটামিন বি৬ ও ম্যাঙ্গানিজ আমাদের শরীরের জন্যে অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া রান্নায় ব্যবহৃত আদায় থাকা ভিটামিন-সি, ভিটামিন বি৬, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম হল ইমিউনিটি বুস্টার হিসাবে কার্যকরী।
ভেষজ চাঃ হার্বালটি তুলসি, দারুচিনি, গোল-মরিচ, লবঙ্গ, কালোজিরা, আদাসহ চিনিমুক্ত গ্রিন টি খুবই উপকারী। তাছাড়া সর্বরোগের প্রতিষেধক কালিজিরা প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ ফোটা সেবন করা উচিৎ।
রোগ প্রতিরোধে করণীয়ঃ
১) দিনে অন্ততপক্ষে ২.৫ লিটার বিশুদ্ধ পানি পানকরা, ২) রাত জাগা পরিহার করা ও রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো ৩) ঘুম থেকে ওঠার পর প্রতিদিন সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় কিছু হালকা ব্যায়াম করা দরকার। সকালে বিশুদ্ধ বাতাস থেকে বুক ভরে শ্বাস নেওয়া, নাকে দম নিয়ে এবং মুখ দিয়ে দম ছেড়ে দেওয়া, প্রতিদিন দীর্ঘ শ্বাস নেয়ার অনুশীলন করা দরকার, নাকে লম্বা করে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে বের করা দরকার। একেক বার ৩-৫ মিনিট করে দিনে অন্তত ৩ বার অভ্যাস করা। ৪) সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-র অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস তাই সকাল বেলা অন্তত ১০ মিনিট দেহে সূর্যের সরাসরি আলো লাগানো দরকার। ৫) বর্তমান পরিস্থিতিতে চেষ্টা বাইরের রান্নাকরা পার্সেল ফুড, প্রসেসড, বার-বিকিউ, মেরিনেটেড খাবারে সতর্কতা অবলম্বন করা। ৬) পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার দিকে। ৭) বাহির থেকে ফেরার পর কিংবা কাজ শেষে আঙ্গুলসহ ভালো করে পুরো হাত ধুয়ে নেয়া। ব্যবহৃত পোশাক পরিবর্তন করা, সম্ভব হলে গোসল করা, ৮) নিতান্ত প্রয়োজনে জনসমাগমে যাওয়ার দরকার হলে এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে অবশ্যই সঠিক উপায়ে মাস্ক ব্যবহার করা নিরাপদ দুরত্ব সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা উচিৎ অপরিহার্য। ৯) গণ পরিবহন যতটা সম্ভব পরিহার করা কিংবা পরিবহনে উঠে যেখানে সেখানে হাত না দেওয়া এবং যাতায়াত শেষে সঙ্গে সঙ্গে হাত ভালো করে ধুয়ে নেয়া দরাকার। কর্মক্ষেত্রে, হাসপাতালে কিছুক্ষণ পরপর হাত ধুয়ে নেয়া নিরাপদ।
আত্মত্মবিশ্বাস অর্জনঃ অযথা ভয় না পেয়ে প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া। সাধারণ সর্দি-কাশি মানেই করোনা নয়। ভালো করে জেনে বুঝে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য প্রতিদিন প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকা। বারান্দা বা ছাদে গাছের পাশে যাওয়া, আকাশ দেখা, পরিবারের স্বজনদের সাথে আন্তরিক ও ঘনিষ্ঠ সাহচার্যে সময়কাটানো, মনোবিজ্ঞানিদের মতে হাসি-আনন্দে কিংবা হৃদ সাহচার্যে প্রাণশক্তি বৃদ্ধি পায়। সচেতনতার সঙ্গে স্বাভাবিক চলাফেরা করা, নিজে থাকা এবং সামাজিক দ্বায়িত্ববোধ থেকে নিজেদের স্বার্থেই অন্যকেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করা। শিশুদের জন্যও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করতে অভ্যন্ত করা। পাশাপাশি সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর নিকট রোগমুক্তি ও সুস্থ্য থাকার জন্য সাহায্য কামনা করা দরকার।